হেফাজত, আল্লামা শফি, আহমদ শফি

হেফাজত : দেশবাসীর প্রতি যে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন আল্লামা শফি

এই খোলা চিঠিটি আল্লামা আহমদ শফী রহ. ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তা দৈনিক আমার দেশ-এর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। এই চিঠিতে ২০১৩ সালে গড়ে উঠা শাহবাগ আন্দোলনে নানা ধরণের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। এতে কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা এবং এর অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী একটি অনলাইন চক্রকে দায়ী করা হয়। এর পেছনে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, জাফর ইকবাল, গোলাম রব্বানী, অজয় রায় প্রমুখের নাস্তিক পৃষ্ঠপোষকতাকেও দায়ী করা হয়। তাদের এই ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে দাবি জানানো হয় এবং এর প্রতিবাদে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চিঠিটি প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। চিঠিটির পত্রিকায় প্রকাশিত হুবহু ভাষ্য আমরা এখানে তুলে দিচ্ছি,

‘সরকার ও দেশবাসীর প্রতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর খোলা চিঠি
শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন

প্রিয় দেশবাসী! আসসালামু আলাইকুম

আপনারা জানেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। মূলত এটি সর্বজনীন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত সম্পর্কে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান লক্ষ্য।

বাংলাদেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাকুল মাদারিস) এর চেয়ারম্যান, দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শীর্ষ আলিম পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান আমীর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন সংরক্ষণে সর্বাত্মক ও নিরাপষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সংগঠন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি বা কারো সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে জড়ায়নি: আগামীতে এর রাজনৈতিক কোনো এজেন্ডা নেই।

শাহবাগ চত্বরে টানা বার দিন পর্যন্ত চলমান গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে এবং সেখানকার জাগরণ মঞ্চের নানা রকম ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড গভীর পর্যবেক্ষণের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে সে সম্পর্কে অবগত ও সচেতন করার লক্ষ্যে এই খোলা চিঠি।
শাহবাগে যেসব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে
০১. অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মুসলমানদের সন্তান-সন্ততিদের দ্বারা মোমবাতি প্রজ্বলন
০২. নামাজের সময়সহ দিন-রাত অনবরত মাইকে গান-বাজনা।
০৩. কথিত জাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকদের ব্লগে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকার ব্লগ লেখা ও জঘন্য মন্তব্য।
০৪. নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাজা সেবন ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড
০৫. পবিত্র মক্কা-মদিনার ইমাম ও খতিবদের বিশেষ পোশাক কো’বা পরিয়ে ফাঁসির অভিনয়।
০৬. শাহবাগ চত্বরের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যার হুমকি ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ।
০৭. দাড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তির গলায় রশি বেঁধে রাসূলের সুন্নাত ও ইসলামের প্রতীকসমূহের অবমাননা।
০৮. কোমলমতি, কচি-কাঁচা শিশুদের ‘…. ধরে ধরে জবাই কর’ ইত্যাদি অপরাধ প্রবণতামূলক স্লোগান শিক্ষা দেয়া
০৯. বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের আবহমান ইসলামি সংস্কৃতির বিপরীতে ভারতীয় অপসংস্কৃতির নেতিবাচক প্রদর্শনী।
১০. সব ধরনের ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের উস্কানি দিয়ে দেশকে অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া
১১. গভীর রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থানকারী তরুণ-তরুণীদের অবাধ মান্যমাধি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে ফেইসবুক, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ।
১২. সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দেয়া সত্ত্বেও শাহবাগ চত্ত্বর নিয়ে এক শ্রেণীর একটি দেশ মহত ছিল। গণমাধ্যমে দৃষ্টিকটূ ও সীমা ছাড়ানো মাতামাতি।
১৩. রাজধানীর বারডেম ও বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও রাস্তা বন্ধ করারঅমানবিক পদক্ষেপ।
১৪. স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারদের ইসলাম অবমাননার প্রমাণ/ প্রতিবেদন তুলে ধরে নেয়া পোস্ট / লেখা প্রকাশ করার কারণে সম্প্রতি নিরপেক্ষ অনেক ইসলামী ব্লগ সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া।

কাদিয়ানী সম্পৃক্ততা

যুদ্ধাপরাধের বিচার মূলত রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ায় আমরা সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিই নাই। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্যে কাদিয়ানীদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছি। একই মঞ্চে ঘাদানিক নেতা, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী শাহরিয়ার কবীর এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের (কাদিয়ানী) নায়েবে আমীর আবদুল আওয়াল খান পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান করেছে। বর্তমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পেছনে কাদিয়ানীরাও পরোক্ষভাবে বামপন্থী ও সরকারি সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শাহবাগ চত্বর থেকে ১১ জন কাদিয়ানী যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বামপন্থী শাহরিয়ার কবীরের মতো মুশরিক ও মুরতাদরা একদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর অন্যদিকে কাদিয়ানীদের মতো মুরতাদ সংগঠনকে সাথে নিয়ে ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাদের এ অবস্থান সম্পূর্ণ স্ববিরোধী।

অন্তরালে ইসলাম অবমাননাকারী ‘অনলাইন চক্র

মুক্তমনা একটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে ইসলাম ও মহানবী (স.) সম্পর্কে কটূক্তি ও নানা ধরনের অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। শাহবাগ আন্দোলনকে কে করে এ ওয়েবসাইটটি এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মুক্তমনার বিভিন্ন পেইজে ‘বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে মুক্তমনা’, ‘আগামী নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলের অংশগ্রহণ বাতিল কর-মুক্তমনা’ এ ধরনের ইসলাম বিরোধী নানা স্লোগান বড় করে লেখা রয়েছে। আর মুক্তমনাকে যাবতীয় সাহায্য ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই পতিত সংগঠনটি মুক্তমনা ওয়েবসাইটকে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক- ২০০৭’ পুরস্কার প্রদান করেছিল। মুক্তমনার ই-বুকে অবিশ্বাসের দর্শন, বিবর্তনের পথ ধরে, সমকামিতা, যে সত্য বলা হয়নি, ইসলাম ও শরিয়া প্রভৃতি বই পাওয়া যায় যেগুলো ইসলাম, কোরআন ও মহানবী (স.)-এর চরিত্র সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অশ্লীল কটূক্তিতে ভরা। সেই মুক্তমনার সাথে সংশ্লিষ্ট মুরতাদ নাস্তিকরাই বর্তমান শাহবাগ নাটকের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। শাহবাগের পেছনে যেসব ব্লগার ও অ্যাক্টিভিটিস্ট রয়েছে তাদের মধ্যে রাজীব আহমেদ একজন। ব্লগে ‘থাবা বাবা’ ছদ্মনামে থাকা তার পোস্টগুলোতে সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে ‘মোহাম্মক’ বলে ব্যঙ্গ করেছে। মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গী, টিলা ও কুলুখ, সিজদা, মদ ও মোহাম্মকসহ অসংখ্য এমন সব অশ্লীল পোস্ট পাওয়া যায় যেগুলো মহানবী (স.)-এর বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইউরোপীয় ব্যঙ্গচিত্রকেও হার মানায়।

ব্লগার আরিফুর রহমান ইংল্যান্ডে থাকেন, বর্তমানে লিখছেন ওয়ার ও বিভিন্ন ‘নিক’ নামে (সামহোয়্যার ইন ব্লগ)। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজি ফোরামের নেতা। আরেকজন নাস্তিক ব্লগার নিঝুম মজুমদারের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেন। শাহবাগ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা আসিফ মহীউদ্দিন এখন বাংলাদেশের উদীয়মান নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ। শাহবাগ নাটকের অন্তরালে তৎপর তথাকথিত অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্টদের মধ্যে অন্যতম হলো চরম ইসলাম বিদ্বেষী প্রসিদ্ধ ব্লগ সামহোয়্যার ইন-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্লগাররা তাদের ইসলাম বিদ্বেষী পোস্টগুলোর কয়েকটি স্ক্রিনশট নিম্নে তুলে ধরা হলো।

Ashraful Islam Ratul মাহম থাকলে একবার শাহবাগ আয় রাজাকারের চুদারা তোদের মুহাম্মদ (স.) আর নিজামি বাপকে একে অন্যের পোগের ভেতর ঢুকাবো।’

এই ছিল আল্লামা শফির খোলা চিঠি। এই চিঠির পর দেশব্যাপী তীব্র ও বেগবান হয়ে ওঠে তাওহিদি জনতার প্রতিবাদ।

আরো পড়ুন : যেভাবে হয় হেফাজতের আবির্ভাব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top