ইসরাইল, ইরান, পারমাণবিক স্থাপনা, ইসরাইলি কর কর্তৃপক্ষ

১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষতি গাজাযুদ্ধের দ্বিগুণ বেশি

গত ১২ দিনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা এবং পরবর্তী ৬১৫ দিনের ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বলে জানিয়েছে দেশটির কর কর্তৃপক্ষ।

ইসরাইলি কর কর্তৃপক্ষের ক্ষতিপূরণ বিভাগের প্রধান আমির দাহান সোমবার নেসেট ফাইন্যান্স কমিটিকে এই তথ্য জানান।

দাহানের মতে, সোমবার পর্যন্ত ইরানের সরাসরি ব্যালিস্টিক হামলা ও ড্রোন আক্রমণের ফলে ক্ষয়ক্ষতির দাবি ৪.৫ বিলিয়ন শেকেলে পৌঁছেছে। আরো ৫০০ মিলিয়ন শেকেল বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া হামলা এবং পরবর্তী সময়ে হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুথি আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ ছিল ২.৫ বিলিয়ন শেকেল।

তিনি জানান, প্রায় ৫ বিলিয়ন শেকেল অর্থাৎ ১.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতির এই পূর্বাভাস ইঙ্গিত দেয় যে কয়েকটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা পেরিয়ে জনবহুল এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিস্ফোরণের তরঙ্গে আশেপাশের বিশাল অঞ্চলে জানালা ভেঙে ও অন্যান্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিপূরণ দাবি ও এলাকা
দাহান জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত ৪০ হাজার ক্ষতিপূরণ দাবি দাখিল হয়েছে এবং এই দাবি ৫০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এর মধ্যে তেল আবিব থেকে ২৫ হাজার, আশকেলনে ১০ হাজার ৮০০, হাইফা ও একরে ২ হাজার ৬০০ এবং জেরুজালেম থেকে ৯৪টি দাবি জমা পড়েছে।

ভবন ক্ষতির জন্য ৩১ হাজার যানবাহনের জন্য ৩ হাজার ৭০০ এবং আসবাব ও যন্ত্রপাতির জন্য ৪ হাজার দাবি জমা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে ১১ হাজার মানুষকে হোটেলে রাখা হয়েছে এবং আরো ৪ হাজারজন আত্মীয় বা বন্ধুদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিমান প্রতিরক্ষা এবং লক্ষ্যবস্তু
ইসরাইলি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে ইরান ৫৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৩১টি জনবহুল এলাকায় আঘাত হেনেছে। তেহরান থেকে উৎক্ষেপিত প্রায় ১ হাজার ড্রোনের মধ্যে অন্তত একটি বেইত শে’আনে একটি বাড়িতে আঘাত করেছে।

রেহোভটের ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট এবং হাইফার বাজান তেল শোধনাগারে ইরানি হামলা উল্লেখযোগ্য ধ্বংসের কারণ হলেও ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা ও নতুন প্রযুক্তি
কর কর্তৃপক্ষের ১৩০টি মূল্যায়নকারী দল প্রতিটি দাবির স্থান পরিদর্শন করছে। এছাড়া একটি নতুন কম্পিউটার সিস্টেম চালু হয়েছে যার মাধ্যমে দাবি দাখিলকারীরা ছবি আপলোড করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার শেকেল (৮ হাজার ৮১৫ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।

আইন অনুযায়ী, পরিবারগুলো আসবাবপত্রের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ১৮৭ শেকেল এবং ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রপাতির জন্য সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ৯১৪ শেকেল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। অতিরিক্ত মূল্য কভারেজের জন্য কর কর্তৃপক্ষ ০.৩ শতাংশ প্রিমিয়ামে বীমা প্রদান করে। যুদ্ধ শুরুর আগে মাত্র ৬০০ জন এই কভারেজ নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘রাইজিং লায়ন’ অভিযানের পর ৫০ হাজারজন এতে যোগ দেন।

যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও সরকারি উদ্যোগ
শুধু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত নয়, যুদ্ধজনিত বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আরো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ইসরাইল। এই প্রেক্ষাপটে সোমবার ইসরাইলের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যেসব ছোট ব্যবসার বার্ষিক আয় ৩ লাখ শেকেলের নিচে, তারা ব্যবসায়িক ক্ষতির মাত্রার ভিত্তিতে অনুদান পাবে। পাশাপাশি ছুটিতে পাঠানো কর্মীদের জন্যও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে।

১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই বিশাল ক্ষয়ক্ষতির বোঝা স্পষ্ট করে তুলছে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির তীব্রতা। যদিও সম্পত্তি কর মওকুফের ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। তবে এই যুদ্ধ ইসরাইলের জন্য নজিরবিহীন আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

সূত্র : টাইমস অফ ইসরাইল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top