টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
লেবাননে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত বছরের ইসরায়েলি আক্রমণের পর দলটি নেতৃত্ব ও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহর অস্ত্র নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে লেবাননের রাজনৈতিক মহলে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও।
মধ্যপ্রাচ্যে আরো বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়
নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকেই ওয়াশিংটন জোর দিয়ে বলছে, লেবাননের ভেতরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একমাত্র কর্তৃত্ব থাকবে রাষ্ট্রের হাতে। মার্কিন দূত মরগান ওর্টাগাস বলেন, “হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য মিলিশিয়ার নিরস্ত্রীকরণে আমরা সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছি।”
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে
প্রেসিডেন্টের অবস্থান: সংলাপের মাধ্যমে হবে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ
লেবাননের নতুন রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়, সংলাপের মাধ্যমে হবে। তিনি হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
রাজনীতিতে ইসলামী শক্তিকে কেন হারাতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব
হিজবুল্লাহর মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও বার্তা
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের পুরোপুরি প্রত্যাহার সাপেক্ষে অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। যদিও দলটির মিডিয়া অফিস এই বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে, হিজবুল্লাহ-ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষক কাসিম কাসির বলেন, প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা হলেও হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ এখনো আলোচনার বিষয় নয়।
গাজা ও লেবানন থেকে চুরি করা জিনিসপত্র কী করছে ইসরাইল
সামরিক বাস্তবতা ও ইসরায়েলি হুমকি
লিটানি নদীর দক্ষিণে লেবাননের সেনাবাহিনীর মোতায়েন শুরু হয়েছে, যেখানে হিজবুল্লাহ তাদের অবস্থান ছেড়ে দিচ্ছে। তবে ইসরায়েল এখনো বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষক জনি খালাফের মতে, এখনো পূর্ণ সেনা নিয়ন্ত্রণ ঘোষণার বিলম্ব এই হামলার সুযোগ তৈরি করছে।
ইরানে হামলা চালতে ভারত মহাসাগরের যে ঘাঁটিটি ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের ভূমিকা : পর্দার আড়ালে কৌশল
হিজবুল্লাহর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। খালাফ মনে করেন, এই আলোচনার ফলাফল সরাসরি হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। অস্ত্র হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে হিজবুল্লাহর নয়; বরং ইরানের কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে জড়িত।
আঞ্চলিক ৬ দেশকে ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করল ইরান
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্ভাব্য পথ
অস্ত্রের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত থাকলেও হিজবুল্লাহ একটি নতুন রাজনৈতিক অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করেন কাসিম কাসির। তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহর ভূমিকা এখন জাতীয় সংলাপ, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং তাইফ চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতির আলোকে পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।”
ট্রাম্প কেন ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা এখন লেবাননের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। এটি শুধুই একটি সামরিক ইস্যু নয়; বরং আঞ্চলিক কূটনীতি, প্রতিরোধের দর্শন, জাতীয় সংহতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের এক জটিল মেলবন্ধন। আগামী সময়ে এই প্রক্রিয়া কোন দিকে গড়াবে, তা নির্ধারিত হবে ইসরায়েলের অবস্থান, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার ফল এবং লেবাননের অভ্যন্তরীণ সংলাপের বাস্তবায়নের ওপর।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর