আবু সাঈদ
রাজনৈতিক দল কি ঐশী হতে পারে? আমার যতটুকু জানাশোনা, তার ভিত্তিতে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, আমাদের দেশীয় যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, কোনোটিই ঐশী নয়। এর অর্থ হলো, এতে ভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা গ্রহণ করতে অসুবিধা কেন?
এক.
সমালোচনার বিভিন্ন ভাষা রয়েছে- কোনোটা শালীন; কোনোটা শালীন নয়। আলেম থেকে শুরু করে একজন সাধারণ মানুষ, সবারই উচিৎ সমালোচনার ক্ষেত্রে শালিনতা বজায় রাখা। এর জন্য সালাফে সালেহিনের মধ্যে আমাদের উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা অনুগ্রহ করে আমাদের জন্য সুসংহত নীতিমালা রেখে গেছেন। সেসব নীতিমালা অবলম্বন করে সমালোচনা করাই আমাদের জন্য অধিক নিরাপদ।
দুই.
নাকদুর রিজালকেন্দ্রিক যেসব নীতিমালা রয়েছে, এর মধ্যে সালাফে সালেহিন থেকে নানা শব্দমালা বর্ণিত হয়েছে। এর কোনোটা কঠোর; কোনোটা সহনীয়; কোনোটা মোলায়েম। সমালোচনার ক্ষেত্রে এমন তিনো স্তরের শব্দমালা রয়েছে। যুগের পরিবর্তনে এসব শব্দমালারও কোনো কোনোটার ব্যবহার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
এক্ষেত্রে দাজ্জাল শব্দটি উল্লেখ করা যেতে পারে। নাকিদুর রিজাল আলেমগণ ‘বিশেষ ধরনের ধর্মীয় বিকৃতি সাধনকারীদের’ দাজ্জাল অভিধায় সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন যদি ‘বিশেষ ধরনের ধর্মীয় বিকৃতি সাধনকারী’ কাউকে এই শব্দে সমালোচনা করা হয়, তাহলে একে বর্তমান নাকিদদেরও কেউ কেউ অনুপোযোগী মনে করবেন। অর্থাৎ এই শব্দের ব্যবহার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে।
তবে কেউ যদি এই শব্দে সমালোচনা করে, তাহলে তাকে বিকারগ্রস্ত বলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। সর্বোচ্চ বলা যেতে পারে, তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনুপোযোগী শব্দে সমালোচনা করেছেন।
তিন.
সালাফে সালেহিনের একটি রীতি ছিল, তারা বিশেষ কোনো দিকের সমালোচনা করতে গিয়ে ভ্রান্ত অন্য কোনো দলের সাথে তুলনা করতেন। যেমন, ‘কাদিয়ানিরা হিন্দু-খৃষ্টানের চেয়েও জঘন্য কাফের।’ এটি বিশেষ দিক থেকে তুলনা। হিন্দু-খৃস্টান তাদের কুফুর জাহির করে। তাই মুসলিমরা প্রতারিত হচ্ছে না। কিন্তু কাদিয়ানিরা তাদের কুফর গোপন করে। সেজন্য মুসলিমরা প্রতারিত হচ্ছেন। এই বিশেষ দিকটির বিবেচনায় কাদিয়ানিরা অন্যান্য কুফুরি শক্তি থেকে জঘন্য। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সকল দিক বিবেচনায় কাদিয়ানিরা হিন্দু-খৃস্টানদের চেয়ে জঘন্য।
চার.
কেউ যদি অনুচিত ও অনুপোযোগী শব্দে কোনো দলের সমালোচনা করেন, তাহলে আপনি তার শব্দের সমালোচনা করতে পারেন যে তিনি যেসব শব্দে সমালোচনা করছেন, এর সমালোচনা করতে পারবেন। আপনি দরকারি মনে করলে তা অবশ্যই উচিৎ। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আপনি তার ধ্বংসের জন্য বদদোয়া করতে পারবেন।
বদদোয়া খুবই বিপজ্জনক ও স্পর্শকাতর বিষয়। এর মাধ্যমে আপনি মাজলুম হলে জালিমকে শায়েস্তা করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি অন্যায়ভাবে বদদোয়া করেন, তাহলে এই বদদোয়া আপনার উপর ফিরে আসতে পারে।
এখন যার সমালোচনায় অতিষ্ঠ হয়ে আপনি বদদোয়া করলেন, আপনার ধারণা, তার সমালোচনা ঠিক নয়। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন নয়, সেজন্য এতে আপনার ধারণা ভুল হওয়ারও অবকাশ আছে। এখন আপনি বদদোয়া করলেন; যেকোনো কারণেই হোক, আপনি এক্ষেত্রে বাস্তবতার উপর নেই; তাহলে বদদোয়াটা তো আপনার উপরই এসে পড়ছে। তবে এই বদদোয়ায় লাভ কী হলো?
পাঁচ.
এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো, সম্ভব হলে এড়িয়ে যাওয়া। কোনো কারণে যদি তা সম্ভব না-ই হয়, তাহলে ওই অনুচিৎ সমালোচনার যৌক্তিক সমালোচনার স্বর বৃদ্ধি করে। যেন ধীরে ধীরে সমালোচনাটা স্তিমিত হয়ে যায়।
লেখক : সাংবাদিক ও বিশ্লেষক




