ইসলামি দল, পশ্চিমা বিশ্ব,

ইসলামী দল নির্বাচিত হলে পশ্চিমা বিশ্ব কি তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেবে না?

সাইফুল্লাহ আল মানসুর

আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সম্মানিত এক ভাই একটু আগে লিখলেন যে, বাংলাদেশে কোন ইসলামি দল ক্ষমতায় আসলেও সে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব তাঁকে ক্ষমতায় থাকতে দিবে না। এই কথাটা ক্ষেত্র বিশেষে সত্য আবার ক্ষেত্র বিশেষে মিথ্যা। কেন মিথ্যা আর কেন সত্য এই প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। প্রথমত, আমেরিকা এখনো পর্যন্ত যতগুলো মুসলিম দেশের সরকার পতন ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে দু একজন ছাড়া কেউই ইসলামি শাসক ছিলো না। বেশিরভাগই ছিলো স্বৈরাচার বা ইসলামপন্থীদের ওপর খড়হস্ত। সেটা ইরাকের সাদ্দাম, লিবিয়ার গাদ্দাফি যেই হোক না কেন। ইরাকের সাদ্দামের পতন আমেরিকা ঘটিয়েছিলো ইরাকের তেল কব্জা করা এবং একটা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আমেরিকা তখন শেল তেল এতটা উৎপাদন করতো না। তাই সে মনে করেছিলো ইরাকের তেলের ওপর কব্জা প্রয়োজন। অন্যদিকে শীতল যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকার ৩০ এর বেশী অস্ত্র কোম্পানি ভেঙ্গে গঠিত হলো মাত্র ৫ টি অস্ত্র কোম্পানি। তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য চাই ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো একটা যুদ্ধ। যা চলবে বেশ সময় লম্বা সময় ধরে। এই জায়গায় আমেরিকা ও অস্ত্র কোম্পানির স্বার্থ মিলে যাওয়ায় ইরাকে হামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে আমেরিকা। নাইন এলিভেন হওয়ার পর বুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স) চাচ্ছিলেন ইরাকে হামলা করতে নাইন এলিভেনের দোষ ইরাকের ঘাড়ে চাঁপিয়ে।

তখন নাইন এলিভেনের সাথে ওসামা বিন লাদেনের নাম জড়িয়ে পড়ায় আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা করে। তো আমেরিকার কাছে কে ইসলাম প্রিয় আর কে ইসলাম প্রিয় নয় এটা কোন ইস্যু না। কোন না ভাবে যদি আমেরিকার এমন স্বার্থ কোন দেশের সাথে জড়িয়ে যায় তাহলে আমেরিকা প্রথমে সুবিধা দিয়ে তা আদায় করার চেষ্টা করে। কথা না শুনলে নিষেধাজ্ঞা বা যুদ্ধ করে। তাও একেবারে শেষ পর্যায়ে। সেই দেশের শাসক ইসলামি হলেও আমেরিকা যুদ্ধ করবে, সেকুলার হলেও যুদ্ধ করবে। এই হিসেবে আমেরিকা ইসলামি না সেকুলার এসব নিয়ে কেয়ার করে না। কিন্তু ইসলামি হওয়া বা পশ্চিমা সংজ্ঞায় কেউ গণতান্ত্রিক আর উদারপন্থী নেতা না হলে আমেরিকা তাঁকে ব্ল্যাকমেইল এই ইস্যুতে করতেই পারে। তখন ঐ শাসকের আমেরিকার ব্ল্যাকমেইলকে অগ্রাহ্য করার শক্তি আছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। যদি শক্তি না থাকে তাহলে আমেরিকার ইচ্ছে হলে এই ইস্যুই সেই শাসকের গলার ফাঁ স হতে পারে। বর্তমানে আমেরিকা বিরোধী অনেক শাসককই আছেন। যাদের বেশিরভাগই আমেরিকার হুমকিকে অগ্রাহ্য করার মতে শক্তি রাখেন না। এমনকি ভারতের মোদিও রাখেন না। এখন দেখে মনে হতে পারে মোদি চীন ঘনিষ্ঠ। চীন যখন থেকে পৃথিবীর শক্তিশালী অর্থনীতি তখন থেকেই ভারত চীন ঘনিষ্ঠ। সীমান্তে যত ঝামেলাই থাকুক না কেন। এখন মোদি ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন। চীন, রাশিয়া ও তুরস্কের এখন আমেরিকার ব্ল্যাকমেইল অনেকটা কাটিয়ে উঠার শক্তি হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার শক্তি আপনারা দেখেছেন ও দেখছেন।

তুর্কী প্রেসিডেন্ট আমেরিকা সমর্থিত ক্যু সামলিয়ে এখনো টিকে আছেন এবং তুর্কী সামরিক শক্তি দিন দিন বাড়ছে। যা তুরস্ককে ক্ষেত্র বিশেষে ভারতের চেয়ে শক্তিশালী দেশে পরিণত করেছে। তুরস্ককে আমেরিকা নানা ইস্যুতে ব্ল্যাকমেইল করতে চায় কিন্তু তুরস্ক তাঁর শক্তি দিয়ে সেটা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত। তুরস্কের সেই শক্তি না থাকলে এরদোয়ানের পরিণতিও গাদ্দাফি বা সাদ্দামের চেয়ে আলাদা হতো না। তো শক্তি থাকলে আপনি ইসলামপন্থী বা আমেরিকার আধিপত্যবাদ বিরোধী যেটাই হন না কেন আপনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। প্রশ্ন হচ্ছে কোন ইসলামি দল বা শাসকের সেই ক্ষমতা আছে কি না? বর্তমান বাংলাদেশে কোন ইসলামি দলের সেই ক্ষমতা নেই। কারণ তারা পৃথিবীকে যেমন মনে করে পৃথিবী আসলে তেমন না। একই কথা বাংলাদেশের তথাকথিত সেকুলারদের জন্যও। তারা পৃথিবীকে যেমন মনে করে পৃথিবী আসলে তেমন না। ইসলামি দলগুলো প্রথমে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে কি না এবং এরপর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কি না এই দুটো প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটো সমস্যা বা প্রশ্নের সমাধান হলো ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আর ক্ষমতা অর্জন করার প্রথম ধাপ হলো যোগ্য নেতা খুঁজে বের করা। যেটা আমি এখন কোন ইসলামি দলের ভিতরই দেখতে পাচ্ছি না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top