মাহমুদ মাসরুর
এক সময় রেজভী আলেমরা উলামায়ে দেওবন্দকে ছুতানাতা অজুহাতে তাকফির করত। ওই সমস্ত তাকফিরের ইলমি, নৈতিক, সামাজিক কিংবা আইনগত কোন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়নি। বরং তাফীরকারীরাই ছোট হয়েছে, কিন্তু ওলামায়ে দেওবন্দকে ছোট করা যায়নি।
আরবের ওয়াহাবিরা নিজেদেরকে তাওহিদী রাজনীতির দাবিদার এবং ওসমানীদেরকে মুশরিকি রাজনীতির বাহক আখ্যায়িত করত। তাদের এই অসহিষ্ণুতা এবং অপরিণামদর্শীতা উম্মতের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি, নিজেরাও কোন মহত্ত্ব লাভ করতে পারেনি।
আশআরী মাতূরীদী পন্থায় যারা আকিদার দর্শন চর্চা করেন, তাদের কেউ কেউ ইবনে তাইমিয়া এবং ইবনুল কাইয়িমকে এবং এ ধারার আরও আলেমকে তাকফীর করেছেন। কিন্তু তা ইলমি জগতের সমর্থন পায়নি।
ইসলামের প্রতি অফাদার এবং দীন শরীয়তের বিভিন্ন অধ্যায়ের সমঝদার আলেম ইজতেহাদী ভুল করে বিপথে গিয়েছেন এবং সেই ভুলের উপর নিজেদের মাজহাব কায়েম করেছেন, ফলে গোমরাহীর শিকার হয়েছেন, কিন্তু এর দ্বারা তার ‘তাসদীকে কলব’ মুছে যায়নি, তাওহীদের মূল রোকন বিধ্বস্ত হয়নি। তাই পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে তাকফীর করা সহি মনে করেননি।
ফিকহি শাখাগত মাসালায় গায়ের মুকাল্লিদ আহলে হাদিসরা হানাফিদের উপর কত জঘন্য হামলা করে থাকে। কত ধরনের বিষোদগার করতে তাদেরকে দেখা যায়। হানাফিদের নামাজ রোজা সবই বাতিল বলে আখ্যায়িত করতে শোনা যায়। তাদেরকে বড় বড় আলেমগণের ঈমানের উপরও প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়। কিন্তু হানাফী আলেমগণের ধর্মীয় অবদান এবং দলিল প্রমাণের মজবুতির কারণে এই সমস্ত প্রশ্ন অভিযোগ মাঠে মারা যায়।
ইদানিং একই ঘরানার আলেমগণের এক অংশকে আরেক অংশ দালাল, উচ্ছিষ্টভোগী, গোমরাহ, ভন্ড, দরবারী ইত্যাদি ট্যাগিং করতে দেখা যায়। অথচ ‘তানাবুজ বিল আলকাব’ করতে আল্লাহতায়ালা পরিষ্কারভাবে নিষেধ করেছেন!
সুতরাং যথাযোগ্য ব্যক্তিকর্তৃক ইলমী যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে যথেচ্ছা ট্যাগ ব্যবহার করা, শরীয়তের প্রয়োজন ছাড়া কারো উপর কোন অবাঞ্ছিত হুকুম দেওয়া অনেক বড় কবিরা গুনাহ।
ইলমি জগতে মুতাশাদ্দিদ ও ফ্যাসিবাদী মানসিকতার লোকজন ট্যাগবাজি করে। কোন কোন আলেম ভুলেও এমনটা করে থাকেন। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
জবান হেফাজত করতে হবে। নিজের ‘শুরুরে নফস’ থেকে দীন ও শরীয়তকে হেফাজত করতে হবে, ইসলামের সুনাম ও সৌন্দর্য রক্ষায় এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।



