কাদিয়ানী, অমুসলিম

মাজলুমরা কি সত্যিই জালেম হয়ে গেছে

আবু সাঈদ 

ইসলামপন্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলেই বিভিন্ন মহল থেকে একটি বুলি আওড়ানো হয়- মাজলুম এখন জালেম হয়ে গেছে। এই কথা বলে বামরা এখন ইসলামপন্থীদের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাজলুমরা এখন আরো বড় ধরনের জুলুমের শিকার হচ্ছে। বিষয়টা তবে বুঝিয়ে বলি।
আল্লাহর রাসূল সা. বিদায় হজের সময় গোটা উম্মতকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন যে ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াতও যদি তোমার কাছে পৌঁছে থাকে, তাহলে সেটি অপরের কাছে পৌঁছে দাও।’ এরপর বিশেষভাবে উম্মাহর আলেম সম্প্রদায়কে এর জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী। নবীগণ কোনো অর্থকড়ি বা সহায়-সম্পত্তি রেখে যাননি। তারা রেখে গেছেন ইলম।’ এখানে ইলম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অবিকৃত ইসলাম।
এই বাণীর মধ্য দিয়ে রাসূল সা. বিশেষ করে উলামায়ে কেরামকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, তারা যেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অবিকৃত ইসলাম যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দেয়। উলামায়ে কেরাম এই গুরুভার গ্রহণ করে যুগে যুগে ইসলামকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সেজন্য আমরা ১৪০০ বছর পরে এসেও ওই ইসলামই পেয়েছি, যা রাসূল সা. এর যুগে ছিল। এতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন বা পরিবর্ধন নেই।
এই অবিকৃত ইসলাম মুসলিম উম্মাহর অধিকার। ইসলামের সবকিছুকেই মুসলিম হিসেবে আমরা মনেপ্রাণে ধারণ করি। কেউ এসবকে অবমাননা করা কিংবা বিকৃত করার প্রয়াস পাওয়ার অর্থ হচ্ছে, আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। কেউ যদি আমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এই অনধিকার চর্চা প্রতিহত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা বরাবরই দেখে এসেছি যে আমাদের এই অধিকার খর্ব হয়েছে। অথচ প্রশাসন এক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।
আমাদের রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী, কেউ অধিকার বঞ্চিত হলে নির্দিষ্ট পন্থায় সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। সেজন্য মিটিং-মিছিল করা কিংবা মানববন্ধন করার অনুমোদন সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে। আমরা যখন এই অনুমোদিত পন্থায় আমাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে যাই, তখন বামরা এসে বলতে শুরু করে, আমরা তাদের কণ্ঠ রোধ করতে চাই। আরে ভাই, তুমি আমার ধর্মকে আঘাত করে আমার অধিকার হরণ করলে, সরকার তোমাকে প্রতিহত করা দরকার ছিল, কিন্তু করেনি; সেজন্য আমি আমার অধিকার চাইতে এসেছি; এটা কেন তোমার কণ্ঠ রোধ হতে যাবে? তবে কি আমার অধিকার চাওয়ারও কোনো অধিকার নেই?
আমরা যখন অধিকার চাওয়ার জন্য রাস্তায় নামি, তখন যারা আমাদের অধিকার খর্ব করে দিব্যি নিশ্চিন্তায় আছে, তারা কিংবা তাদের সমর্থকরা এসে আমাদেরকে বাধা দেয়, কিংবা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করে; এটি তো এক ধরনের ‘পায়ে পড়ে ঝগড়া করা’র মতো অবস্থা। এর মধ্য দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা উস্কে দেয়; আমরা যদি এর প্রতিবাদ করতে যাই, তখন তারা মব মব বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। এরপরই তারা আমাদের ব্লাকমেইল শুরু করে যে আমরা তাদের কণ্ঠ রোধ করে দিচ্ছি। কিংবা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছি। আরে ভাই, তুমি পায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসবে, এরপর আমি তোমার ঔদ্ধত্যকে চ্যালেঞ্জ করলে দোষটা আমার কেন হবে? দোষ তো তুমি করেছো। একে আমার অধিকার খর্ব করেছে; তার উপর আমার অধিকার আদায়ের কণ্ঠকে বাধাগ্রস্থ করছো, তাহলে তুমি দোষী না হয়ে আমি কেন দোষী হবো। এভাবেই তারা জালিমের ভূমিকায় থেকেও নিজেকে মাজলুম হিসেবে দাবি করে। এরপর আমাদেরকে বলতে থাকে, মাজলুমরা এখন জালিম হয়ে গেছে।
সুতরাং মাজলুমরা এখন জালিম হয়ে গেছে বলে বামরা এখন ভিক্টিম কার্ড খেলছে। এর মধ্য দিয়ে তারা অধিকার হরণের বৈধতা নিচ্ছে।
আমাদের দেশে খেলাফত ব্যবস্থা নেই। সেজন্য এই দেশে ইসলাম পালন বাধ্যতামূলক নয়। যে যেই মতাদর্শে বিশ্বাস করে, সে ওই মতাদর্শ লালন করতে পারে। কিন্তু আমরা যে মতাদর্শ লালন করি, সেটাকে অবমাননা করা কিংবা তাতে বিকৃতি সাধন করা, এর অধিকার তো কারো নেই। তাহলে যারা অনধিকার চর্চা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার বা প্রশাসন এক্ষেত্রে যথার্থ আন্তরিকতার পরিচয় দেয় না। যে কারণে নিজের আত্মসম্মান রক্ষার্থে অনেক সময় অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এর জন্য প্রথমত প্রশাসন দায়ী; যেহেতু তারা এর সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না; দ্বিতীয় অন্যদের গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসার মতো মানসিকতা দায়ী; কারণ, তারা আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করলে তো আমরা প্রতিবাদ করি না।
লেখক : বিশ্লেষক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top