রাজনীতি, জমিয়ত, ইসলামী আন্দোলন, মামুনুল হক

ইসলামপন্থীদের জোটের রাজনীতি : কিছু শঙ্কা ও কিছু প্রত্যাশা

আশরাফুল হক 

আমি কোনো দলীয় রাজনীতি করি না। কেন করি না, তা বিস্তর আলাপের ব্যাপার। সংক্ষেপে বললে— কিছু নিরেট ইসলামের স্বার্থরক্ষায় কমবেশির হিসাব, কিছু নিজের ক্যারিয়ারের প্রশ্ন, কিছু লাইফ স্টাইলের ব্যাপার এবং কিছু বিষয় বিবিধ। এসবকিছু উৎরে হয়ত কোনো একদিন ময়দানের রাজনীতি করলে করতেও পারি। ততদিনে দেরি হয়ে যাবে, জানি। কিন্তু কিছুই করার নেই।
তবে যেসব দল রাজনীতিতে সরব, তন্মধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি আমার পছন্দের। এরা সকলে এক দলের নন। এদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচে হাইপে আছেন ব্যক্তি হিসেবে আল্লামা মামুনুল হক এবং দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন। আমি আল্লামা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের উপর অবশ্যই আস্থা রাখি। তবে তা অন্ধ আস্থা নয়। এজন্যই এদের অনেক সমালোচনাও আমার মুখে আছে।
আমি জামায়াতকে শরঈ প্রশ্নে ঘৃণা করি। রাজনৈতিক গিরগিটি চরিত্রকে প্রশ্ন করি। ওয়েল ফেয়ার কার্যক্রম, সক্ষমতা এবং ইতিবাচক এক্টিভিটিকে প্রশংসা করি। লক্ষ্য এবং ক্ষমতাচর্চাকে হাসিনার চেয়ে বেশি ভয় করি।
জামায়াতের সঙ্গে মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের জোট নিয়ে আমার হিসাবনিকাশ সরল। জামায়াতের রাজনৈতিক গিরগিটি চরিত্রের উপর ভরসা রাখতে পারি না। তাই যে কল্যাণের জন্য জোট হয়েছে, সেখানে মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনকে খুবই সজাগ থাকতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় একজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, তাদের রাজনীতিতে আমাদেরও ভরসা নেই। তবে ‘এই এই’ কৌশলে পথ চলছি।
বুঝলাম— তাদের জার্নিটা থাকবে পুলসিরাতের জার্নি। ইন্টারনাল ফাইট থাকবে। যে কোনো মুহূর্তে এই জার্নির ইতি ঘটবে। রিস্ক নিয়েই এই পথচলা। লাভবান হতে পারা বা না পারা ভবিষ্যতে ন্যাস্ত। নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়া এবং বিএপিকে নিরঙ্কুশ হতে না দেওয়াই মূল লক্ষ্য।
বিএপিকে নিরঙ্কুশ হতে না দেওয়ার প্রচেষ্টাকে সালাম জানাই। কারণ ক্ষমতার চেয়ার পেলে কেউই আর মানুষ থাকে না, সকলেই শাসক হয়ে ওঠে। এ দেশে হাসিনার মত আর কোনো দানব অমানুষ আমরা দেখতে চাই না।
শঙ্কার জায়গা হল— পথচলা যেই লক্ষ্যেই হোক আর যেই পদ্ধতিতেই হোক, জামায়াতের সঙ্গে কৌশলী খেলায় এবং সক্ষমতায় এরা পেরে উঠবেন তো! আমার এই শঙ্কা ভুল প্রমাণিত হলেই খুশি হব।
মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের বাইরে রইল জমিয়ত। বিএনপির সঙ্গে তাদের জোটটা হোক। তা না হলে বিএনপি অনিবার্য কারণেই বামদের পৈত্রিক সম্পদে পরিণত হবে। তা হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। জমিয়ত যে কায়দায় বিএনপি সঙ্গে যাচ্ছে, তা কি ব্যক্তিত্বসূলভ? নিজস্ব গাটস না থাকলে এই কায়দায় এত বড় দলের কোলে উঠে আখেরি ফায়দা ঘরে উঠবে তো!
রাজনীতি একদিনের হিসাব নয়। সামনে অনেককিছুই ঘটবে। ভালো কিছু ঘটুক, সেই প্রত্যাশা রইল।
আমি মনে করি— ইসলামী আন্দোলন আমাদের। জমিয়ত আমাদের। খেলাফত আমাদের। একেকজনের মাধ্যমে একেক জায়গা থেকে উপকৃত হতে হবে। এজন্য আমরা কেউ কাউকে আক্রমণ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আর গালিগালাজ তো ইসলামে নিষিদ্ধই। কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
লেখক : বিশ্লেষক ও সম্পাদক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top