টুডে নিউজ
নাটোরের বড়াইগ্রামের ইসরাফিল হোসেন (৪২) স্ত্রী-সন্তানদের সুখের কথা ভেবে দেড় বছর আগে গিয়েছিলেন ওমানে। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের উপার্জনে সংসার মোটামুটি চলছিল তার।
দেশে রেখে যাওয়া দুটি ছেলেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল তার দুচোখ জুড়ে। একইসাথে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আশায় বিদেশ গিয়েছিলেন তিনি।
সংসারে সুখের মুখ দেখা হলো না তার। উল্টো নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে কফিনবন্দী লাশ হয়ে ফিরেছেন তিনি প্রিয় স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের কাছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে তার লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারী আর বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের পরিবেশ।
ইসরাফিল হোসেনের শ্যালিকা শেফালী খাতুন জানান, দেড় বছর আগে তার দুলাভাই ওমানে যান। তিনি সেখানকার কাসাব এলাকায় কৃষি খামারে কাজ করতেন। মাস শেষে বেতনও পেতেন ভালো। প্রতিদিন অন্তত একবার স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলতেন। ঘটনার দিন গত ৩০ ডিসেম্বর তিনি খামারে কাজ করতে করতে প্রথমে আমার বোনের সাথে এবং পরে আমর সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন। কথা বলতে বলতেই একটা আর্তনাদের শব্দ শুনতে পাই। এরপর আর কোনো কথা বলেননি তিনি। পরে খবর পাই কে বা কারা তার মাথার পেছনে ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।
ইসরাফিলের শ্যালক মোস্তফা কামাল জানান, আমার দুলাভাই সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার মাথার পেছনে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গোসল করানোর সময়ও তার মাথা থেকে রক্ত ঝরেছে। আমাদের ধারণা সেখানকার মালিক (কফিল) এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এ কারণেই তিনি সেখানে কোনো আইনি প্রক্রিয়া না করে তড়িঘড়ি করে লাশ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনকি ওমানের একই জায়গায় আমাদের আরো স্বজনরা কর্মরত থাকলেও তাদেরকে না জানিয়ে লাশ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকি মালিকপক্ষ মৃত্যুর পর তার পরিবারকে কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়নি। তবে আমরা ওমানে বাংলাদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে সেখানকার থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
শুক্রবার দুপুরে বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষে বিকালে কফিনবন্দী ইসরাফিলের লাশ বড়াইগ্রামের দ্বারিকুশী গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় সেখানে স্বজনদের কান্নায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লাশটি এক নজর দেখার জন্য শত শত লোক জড়ো হয় তার বাড়িতে।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্ত্রী জোলেখা বেগম জানান, তিনি আমাদের ভালো রাখতে প্রবাসে গিয়ে দেশে ফিরে এলেন লাশ হয়ে। এখন আমার অনার্সে ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ছেলেকে কে দেখবে, কিভাবে আমি তাদের বড় করব। কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল আজম খান জানান, ঘটনাটি ওমানে ঘটেছে। এ কারণে এ ঘটনায় সেখানকার আদালতে বা থানায় মামলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা সেখানে বাংলাদেশী দূতাবাসের সহযোগিতা নিতে পারেন।